খুলনায় খাদ্য কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মজুমদার অপহরণ মামলার প্রধান আসামীকে নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এজাহারে উল্লিখিত মো: রেজা এক সময় তেরখাদা উপজেলার ১ নং আজোগড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের আহবায়ক ছিলেন। দীর্ঘদিন দলে কোন পদে না থাকলেও বিএনপি ও অঙ্গ দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যর ছবি ছড়িয়ে পড়েছে মোবাইলে।
রোববার সন্ধ্যায় নগরীর ৪ নং ঘাট এলাকা থেকে অপহৃত হন খাদ্য বিভাগের ৪ নম্বর ঘাট ইনচার্জ সুশান্ত কুমার মজুমদার। দূর্বৃত্তরা অপহরণের পর ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাকে পিস্তল ঠেকিয়ে মারপিট করে চাঁদা দিতে সম্মত করা হয়। পরে তিন লাখ ২০ হাজার টাকায় রফা হয়, যার মধ্যে দুই কিস্তিতে বিকাশ মাধ্যমে ৪৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। তাকে অপহরণের একটি ভিডিও চিত্র ফেসবুকে ভাইরাল হলে তৎপর হয়ে ওঠে প্রশাসন। তাকে উদ্ধারে শুরু হয় অভিযান। সাড়ে ৪ ঘন্টা পর তেরখাদা উপজেলার একটি স্কুল থেকে উদ্ধার হন সুশান্ত। ট্রালারযোগে অপহরণকালে তাকে বেদম মারপিট করে দূর্বৃত্তরা।
অপহরণের ঘটনায় সুশান্তর স্ত্রী মাধবী রানী মজুমদার পাঁচ অপহরণকারী ও বিকাশে টাকা নেওয়া দুই এজেন্টসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন। আসামিরা হলেন- তেরখাদা উপজেলার আজগড়া গ্রামের মো. রেজা, বাবু মন্ডল, জামাল হাওলাদার, নাছির, টুনু এবং বিকাশ এজেন্ট আলমগীর কবির ও মুসা খান। তাদের মধ্যে দুই বিকাশ এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মূল অপহরণকারী পাঁচজন এখনও পলাতক।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা থানার এসআই মো: সাইদুর রহমান জানান, মূল অপহরণকারীরা গ্রেফতার হয়নি, তবে এই মুহুর্তে আমরা অভিযানে আছি। খুব শিগগিরই তারা ধরা পড়বে বলে আশা করছি। দুইজন বিকাশ এজেন্টকে আমরা প্রথম দিনই আটক করেছি। তাদের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া ২৫ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে।
এদিকে সুশান্ত কুমার মজুমদার অপহরণ মামলার প্রধান আসামী মো: রেজাকে নিয়ে দেখা দিয়েছে চাঞ্চল্য। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুশান্ত মোবাইলে ছবি দেখে গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে রেজাকে সনাক্ত করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেজা এক সময় তেরখাদা উপজেলার ১নং আজগড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের আহবায়ক ছিলেন। এরপর আর কোন পদ পদবীতে তাকে দেখা যায়নি। তবে বিএনপি ও যুবদলের সব কর্মসূচিতে সক্রিয় ভাবে তিনি অংশ গ্রহণ করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা, জেলা বিএনপির ও যুবদলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সাথে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাকে ঘনিষ্ঠ অবস্থানে দেখা গেছে। খুলনা জেলা যুবদলের ফেসবুক পেজের এডমিনও রেজা। সম্প্রতি এক যুবদল নেতার সুপারিশে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আউটসোর্সিং কর্মী হিসেবে চাকরি শুরু করেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
তেরখাদার আজগড়া ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দা জানান, রেজার আচার আচরণ, চলাফেরা অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও বেপরোয়া। এলাকায় নানা অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত। চুরি ও মাদকের সাথেও তার সংশ্লিষ্টতা আছে। পদে না থাকলেও বিএনপি নেতাদের কাছাকাছি থাকায় সবাই তাকে সমীহ করে চলে।
খুলনা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান সদস্য সচিব আব্দুল মান্নান মিস্ত্রি বলেন, রেজা অনেক আগে ইউনিয়ন ছাত্রদলের আহবায়ক ছিল। কিন্ত আমি দায়িত্ব পালন কালে সে নেতৃত্বে ছিলনা। শুনেছি এলাকায় নানা বিতর্কিত কাজে জড়িত।
খুলনা জেলা যুবদলের আহবায়ক ইবাদুল হক রুবায়েদ বলেন, রেজা দলীয় কোন পদে নেই। সে আমাদের কর্মী নয়। শীর্ষ স্থানীয় অনেক নেতার সাথে তার ছবি রয়েছে, এ প্রসঙ্গে রুবায়েদ বলেন, বিএনপির কর্মসূচিতে হাজারো মানুষ অংশ নেয়। কে কখন পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে তা চিহ্নিত করা যায়না।
খুলনা সদর থানার ওসি হাওলাদার সানওয়ার হুসাইন মাসুম বলেন, অপহরণকারীদের গ্রেফতারে আমাদের টিম কাজ করছে। দ্রুত তাদেরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।