আজ || শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
শিরোনাম :
  জুলাই অভ্যূত্থানে শহীদ স্মরণে খুলনায় বিএনপির মৌন মিছিল – তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কটূক্তি সহ্য করা হবেনা       সাকিব রায়হানের কবর জিয়ারত; পরিবারের পাশে বিভাগীয় কমিশনার       মীর মুগ্ধ’র শাহাদাত বার্ষিকী – শোকে শ্রদ্ধায় কৃতি শিক্ষার্থীকে স্মরণ করলো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়       যুবদল নেতা মাহবুব হত্যা : খুলনা ও সাতক্ষীরা থেকে আরও দু’জন গ্রেফতার       খুলনায় জামায়াতের বিক্ষোভ – দেশ এখনও ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়নি       পরিস্থিতির জন্য অন্তবর্তী সরকারের নির্লিপ্ততা দায়ী : খুলনা যুবদল       বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা নিরসনে শৈলমারী গেটের পলি অপসারণ শুরু       কুয়েট চালুর দাবিতে ইউজিসি’তে স্মারকলিপি দিয়েছে গার্ডিয়ান ফোরাম       ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে খুলনা ছেড়েছেন এনসিপি নেতারা       আ.লীগ জঙ্গী সংগঠন, গোপালগঞ্জ ফ্যাসিস্টদের আশ্রয় কেন্দ্র; অভিযুক্তদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে    
 


খুলনায় যুবদল নেতা মাহবুব হত্যায় মামলা দায়ের

খুলনায় যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান মোল্লা হত্যাকান্ডের ঘটনায় দৌলতপুর থানায় মামলা হয়েছে। শনিবার দুপুরে নিহতের পিতা আব্দুল করিম মোল্লা বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতারের লক্ষ্যে পুলিশের তিনটি টিম কাজ করছে। কয়েকটি বিষয়কে মাথায় রেখে পুলিশের তদন্ত কাজ এগোলেও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর আতাহার আলী আমার দেশকে বলেন, দুপুর দেড়টার দিকে থানায় মামলা লিপিবদ্ধ হয়েছে। মামলা নম্বর ১২, তারিখ ১২/০৭/২৫। ধারা- ৩০২ ও ৩৪। মামলায় কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। সন্ধেহভাজন হিসেবে কারো নাম নেই।

ওসি জানান, ঘটনার তদন্তে গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম এবং পুলিশের দুটি টিম গতকাল থেকেইে কাজ শুরু করেছে। এলাকার আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক বিরোধ, কুয়েট ঘটনার প্রতিক্রিয়া, পার্টি অফিস ভাংচুর মামলার বাদী হওয়া, মাদক ব্যবসা সংক্রান্ত বিরোধ, ইত্যাদি নানা বিষয়কে মাথায় নিয়ে কাজ এগোচ্ছে। কিলিং মিশনে তিনজন অংশ নিয়েছিলেন এবং মাত্র ৩/৪ মিনিট সময়ের মধ্যে তারা হত্যাকান্ড সংঘটিত করেছে। তারা মহেশ্বরপাশা বাজারের দিকে থেকে এসেছিল এবং হত্যাকান্ডের পর তেলিগাতি দিয়ে বেরিয়ে গেছে। আমাদের হাতে সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে। যা বিশ্লেষণ করে আমরা ধারণা পেয়েছি কোন গ্রুপ এ কাজে জড়িত। আশা করছি দ্রুত তাদেরকে গ্রেফতার করা যাবে।

এদিকে শনিবার সকালে মহেশ্বরপাশা পশ্চিম পাড়ায় নিহত মাহবুবের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে শোকের আবহে মূহ্যমান গোটা পরিবার। মেইন রোড থেকে বেশ খানিকটা ভেতরে এই বাড়ি। একেবারে গ্রামীণ পরিবেশ। রাস্তায় লোকজন চলাচল নেই চলে। যাদেরকে পাওয়া গেলো, হত্যার বিষয়ে কথা বলতে চাননা প্রায় কেউই।

স্বামী হারানোর শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন স্ত্রী এরিনা। আগে থেকেই হাই ব্লাড প্রেশারের রোগী তিনি। শুক্রবার দুপুরে দুই মেয়েকে খেতে দিয়ে শুয়ে ছিলেন। সবাই নামাজ পড়তে গেছে। এ সময় সলেমান নামে এক প্রতিবেশী এসে বালতি চায়। বলে মাহবুব ভাইয়া গাড়ি ধোবে। নামাজ না পড়ে এসব কাজ করায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন তোমার ভাইকে বাসায় আসতে বলো। অল্প সময় পরেই বাজি ফোটানোর মতো শব্দ পান এবং পরপরই সলেমান রাস্তা থেকে বাসায় ছুটে এসে জানায় ভাইকে কারা গুলি করেছে। আমি ছুটে যেয়ে দেখি ও রাস্তায় পড়ে আছে। কতো চিৎকার করেছি। কেউ আসেনা, কেউ ধরেনা। এরিনা বলেন, কয়দিন ধরেই ফোনে তাকে হুমকি দিচ্ছিল। ও বলতো আমি কারো ক্ষতি করিনি। আমাকে মারবে কেন? হত্যায় কারা জড়িত বলতে পারবো না, কারণ আমাকে কারো নাম বলেনি।

মাহবুবকে গাড়ি ধোয়ায় সহযোগিতা করছিলেন স্থানীয় ভ্যানচালক সলেমান। আমার দেশকে বলেন, ভাইয়ার কথা মতো বাড়ি থেকে বালতি নিয়ে গাড়ির পেছনের নিচের দিকে ধুচ্ছিলাম। ভাই ছিলেন সামনে। এ সময় এক মটর সাইকেলে তিনজন লোক আসে। একজন হেলমেট পরা। তারা নেমেই ফায়ার করলে ভাই সামনের দিকে দৌড় দেয়। কিন্ত বেশিদূর যেতে পারেনি। রাস্তায় পড়ে যায়। গুলির শব্দ শুনে আমি মাথা তুললে ওরা আমাকে দেখতে পায়। তখন আমার দিকে তাক করলে ছুটে বাড়ির ভেতর ঢুকে যাই। আমাকে ছোড়া গুলি বাড়ির দেয়ালে লাগে। আমি তাদেরকে চিনতে পারিনি।

মাহবুবের শ্বশুর আজাদ বেগ বাবু জানান, কারা হত্যা করেছে আমরা বলতে পারবো না। তবে সে বিএনপির রাজনীতি করতো। দৌলতপুর বিএনপি অফিস ভাংচুর মামলার বাদী ছিল সে। যে মামলায় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আসামী ছিল। ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদলের সাথে শিবিরের একটা বড় গ্যাজ্ঞাম হয়। এলাকার মানুষ হিসেবে মাহবুব ছাত্রদলের পক্ষে ক্যাম্পাসে গেছিলো। যে কারণে অনেকের রাগ ছিল। এ রকম রাজনৈতিক কিছু বিরোধ তার ছিল। কিন্ত খুন কারা করেছে তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব পুলিশের। পুলিশের তদন্তে সত্যটা বের হয়ে আসবে, ন্যায় বিচারের স্বার্থে এটা আমাদের দাবি।

খুন হওয়ার ৫/৭ দিন আগে থেকে মাহবুবের মোবাইলে হুমকি আসতো, তাকে গুলি করে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিতো- জানালেন ছোট চাচা আব্দুর রহিম মোল্লা। এ বিষয়ে থানায় জিডি করার চিন্তা করছিলেন তারা। তার আগেই শেষ হয়ে যায় সবকিছু।

মামলার বাদী নিহত মাহবুবের পিতা আব্দুল করিম মোল্লার সাথে কথা হয় সকালে। জানালেন কিছু সময়ের মধ্যে থানায় যাবেন মামলা করতে। ঘটনার সময় তারা সবাই মসজিদে ছিলেন। ফলে হত্যায় অংশ নেওয়া কাউকে দেখেননি। মামলার এজাহারে তাই নাম থাকছেনা কারো। নির্দিষ্ট করে কাউকে সন্ধেহও করছেন না তারা। তবে পুলিশ প্রশাসন ইচ্ছে করল্ইে কারা তার ছেলেকে মেরেছে তা বের করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

উল্লেখ শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে নগরীর দৌলতপুর থানার মহেশ^রপাশা পশ্চিম পাড়ায় নিজ বাড়ির সামনে আতাতায়ীর গুলিতে নিহত হন থানা যুবদলের সাবেক সহ সভাপতি মাহবুবুর রহমান মোল্লা। একটি মটরসাইকেলে তিনজন এসে তাকে গুলি করে হত্যার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে পায়ের রগ কেটে দেয়। মাহবুবের শরীরে ৯টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে থানায় মাদক, মারপিট ও নানা অভিযোগে ৮টি মামলা রয়েছে। এশা বাদ মহেশ্বরপাশা পশ্চিম পাড়া ঈদগাহে নামাজে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।

১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংঘটিত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষকালে রামদা হাতে ছবি ভাইরাল হলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে মাহবুব। পরে কেন্দ্রীয় যুবদল তাকে বহিস্কার করে। বহিস্কৃত হলেও তিনি দলীয় কর্মকান্ডে নিয়মিত অংশ নিতেন। শেখ হাসিনার শাসনামলে হামলা, মামলা, কারা নির্যাতন সহ্য করেও রাজপথে বিএনপির কর্মসূচিতে সাহসিকতার সাথে অংশ নিতেন মাহবুব। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গোটা এলাকায় ক্ষমতাধর হয়ে ওঠে সে। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার সহ নানা বিতর্কিত কাজে জড়িয়ে পড়ে। এনিয়ে প্রতিপক্ষের সংখ্যা বাড়লেও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বদৌলতে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন তিনি।


Top