আজ || শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
শিরোনাম :
  যুবদল নেতা মাহবুব হত্যা : খুলনা ও সাতক্ষীরা থেকে আরও দু’জন গ্রেফতার       খুলনায় জামায়াতের বিক্ষোভ – দেশ এখনও ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়নি       পরিস্থিতির জন্য অন্তবর্তী সরকারের নির্লিপ্ততা দায়ী : খুলনা যুবদল       বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা নিরসনে শৈলমারী গেটের পলি অপসারণ শুরু       কুয়েট চালুর দাবিতে ইউজিসি’তে স্মারকলিপি দিয়েছে গার্ডিয়ান ফোরাম       ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে খুলনা ছেড়েছেন এনসিপি নেতারা       আ.লীগ জঙ্গী সংগঠন, গোপালগঞ্জ ফ্যাসিস্টদের আশ্রয় কেন্দ্র; অভিযুক্তদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে       খুলনায় অপহরণ মামলার প্রধান আসামী ছাত্রদল নেতা       কুয়েটে এক বছরের অনিয়ম তদন্তে ইউজিসি’র তদন্ত কমিটি       খুলনার সাথে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল সাড়ে ৪ ঘন্টা    
 


যুবদল নেতা মাহবুব হত্যায় চরমপন্থী সম্পৃক্ততা, আরও এক যুবক গ্রেফতার

যুবদল নেতা মাহবুব হত্যার ঘটনায় সজলের পর এবার আলাউদ্দিন নামে আরও এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মাহবুবের অবস্থান সম্পর্কে খুনীদের তথ্য সরবরাহ করেছিল সে। দু’দিনের রিমান্ডে গ্রেফতারকৃত সজল হত্যাকান্ড সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তার স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে পুলিশের তদন্ত ও মূল আসামী গ্রেফতারে তৎপরতা চলছে। কিলিং মিশনে চরমপন্থীরা অংশ নিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও চাঞ্চল্যকর মাহবুব হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মীর আতাহার আলী এসব তথ্য জানিয়ে বলেছেন, এই হত্যাকান্ড সম্পর্কে এখনো চূড়ান্ত কিছু বলার সময় আসেনি। কোন একক কারণে নয়, তাকে হত্যা করার পেছনে অনেক কারণ জড়িত। রিমান্ডে সজল অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তার দেওয়া তথ্যমতে আমরা রোববার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মহেশ্বরপাশা ও তেলিগাতির সীমান্ত এলাকা থেকে আলাউদ্দিনকে (২২) গ্রেফতার করি। শুক্রবার হত্যার সময় সজলের সাথে আলাউদ্দিনও ছিল। তারা একসাথে মাহবুবের অবস্থান সম্পর্কে খুনীদের তথ্য দিচ্ছিল।

আলাউদ্দিনের পিতার নাম নুরুল ইসলাম, বাড়ি মহেশ্বরপাশা। তার নির্দিষ্ট কোন পেশা নেই। একটি ইঞ্জিনের ভ্যান থাকলেও নিয়মিত চালায় না।

মাহবুব হত্যাকান্ডের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সিসি টিভির ফুটেজ থেকে তিন মটর সাইকেল অরোহীকে সনাক্ত করা গেছে বলে দাবি করা হয়েছে। তারা হলেন- রায়হান, আসিফ ও ইমন। যারা চরমপন্থী দলের সাথে যুক্ত এবং মাহবুবের সাথে তাদের বিরোধ ছিল। তবে পুলিশ প্রশাসন এখনও তাদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত নয় বলে জানালেন ওসি মীর আতাহার আলী। তার দাবি মূল কিলাররা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবেনা। তিনি জানান, রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার সজলকে আবারও আদালতে তোলা হবে। আর আলাউদ্দিনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে মাহবুব হত্যার পর এলাকায় নানা আলোচনা চলছে। মাহবুবের ঘনিষ্ঠজন ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে শনিবার দৌলতপুর শহীদ মিনারে ও সোমবার মহেশ্বরপাশায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, শোক র‌্যালী হয়েছে। কেন কি কারণে এ হত্যাকান্ড এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে নানা ধারায়।

নিহত মাহবুুবের শ্বশুর ও শ্রমিক দল খুলনা মহানগর শাখার সাবেক প্রচার সম্পাদক আজাদ বেগ বাবু বলেন, বিভিন্ন দিক থেকে মাহবুব হুমকির সম্মুখিন হচ্ছিল। ও বিএনপির জন্য জীবনবাজি রেখে সারা জীবন কাজ করেছে। কিন্ত ৫ আগস্টের পরে অনেক কিছু বদলে যায়। চিহ্নিত আওয়ামী লীগাররা দলের বড় নেতাদের কাছে আশ্রয় নেয়। তারা দল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতো। আগামী দিনে বিএনপির পদে যেতে চাইতো। এ নিয়ে মাহবুবের সাথে বিরোধ ছিল। দলীয় অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা করে মাহবুব। এ ছাড়া মানিকতলায় যুবদলের সুধী সমাবেশে মারামারির ঘটনায় তার বন্ধু জাকির মামলা করলে আসামিরা মাহবুবের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। নিয়মিত তাকে হুমকি দেওয়া হতো। কুয়েটের ঘটনায় মাহবুবকে ফাঁসানো হয়েছে। ওতো ইচ্ছে করে যায়নি, বিএনপি নেতারা ওকে যেতে বলেছিল। এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে ওর অবস্থান ছিল।

তার দাবি, হত্যাকান্ডে জড়িতরা আওয়ামী লীগের নেতাদের আত্মীয়স্বজন। তারা কুয়েট এলাকায় আরিফকে হত্যা করেছে, চাঁদাবাজিও করছে। কিছুদিন আগে দিলীপ মাস্টারকে গুলি করেছে। খানাবাড়ি এলাকায় হাউস বিল্ডিংয়ের একটি বাড়ির মালিকানা নিয়ে ঝামেলা তৈরি হওয়ায় মাহবুবকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছিল। ভিডিও ফুটেজে দেখা তিনজনের পরিচয় সম্পর্কে মন্তব্য না করে তিনি বলেন, প্রকাশ হওয়া ফুটেজ দুটো ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরের। বাড়ির কাছের ফুটেজগুলো গভীর ভাবে বিশ্লেষণ করা হোক। এমনও হতে পারে, যারা মাহবুবের খুব কাছের মানুষ ছিল, তাদের কেউ খুনের সাথে জড়িত।

ক্ষোভের সাথে আজাদ বেগ বাবু বলেন, পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার বক্তৃতায় মাহবুবকে দলের কর্মী হিসেবে অভিহিত করেছেন। কিন্ত স্থানীয়ভাবে মাহবুবের পরিবারের পাশে এসে কেউ দাঁড়ায়নি। মহানগর বিএনপি সভাপতি শফিকুল আলম মনা ভাই জানাজায় এসেছিলেন। আর সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাদী খোঁজ নিচ্ছেন। বাকি আর কেউ আসেনি।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, গত ৯ অক্টোবর বাগেরহাটের রামপালে অস্ত্রসহ হুমায়ুন কবির হুমা, রায়হান ইসলাম, আসিফ মোল্লা ও ইমন হাওলাদার নামে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। স্থানীয় চরমপন্থি নেতা বড় শাহীনকে হত্যার উদ্দেশ্যে তারা সেখানে গিয়েছিল বলে পুলিশের ধারণা। আটকের পেছনে আরেক সন্ত্রাসী আরমানের ভূমিকা ছিল। আরমান সম্পর্কে মাহাবুবের খালাতো ভাই। স্থানীয়রা জানান, রায়হান, আসিফ ও ইমনের বাড়ি মহেশ্বরপাড়া পশ্চিমপাড়ায়। আট মাস জেল খেটে গত মাসে তারা জামিন পায়। গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত ওই কর্মকর্তার ভাষ্য, খুনের সাথে জড়িত বলে যাদের নাম সামনে আসছে তারা আদৌ না হতে পারে। মটর সাইকেলে একজন ছিল হেলমেট পরিহিত। ধারণা করা যায়, ওই ব্যক্তি স্থানীয়, বাকি দুজনকে হত্যার কাজে বাইরে থেকে আনা হয়েছে। সন্ত্রাসী চরমপন্থীদের নেটওয়ার্ক সব জেলায় ছড়ানো থাকে। অন্য জেলা থেকে কিলার আনা হলে তাকে চট করে সনাক্ত করা স্থানীয়দের পক্ষে সম্ভব হয়না।

উল্লেখ্য, শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে নগরীর দৌলতপুর থানার মহেশ^রপাশা পশ্চিম পাড়ায় নিজ বাড়ির সামনে প্রাইভেট কার ধোয়ার সময় মটার সাইকেল যোগে আসা তিন দুর্বৃত্ত গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে থানা যুবদলের সাবেক সহ সভাপতি মাহবুবুর রহমান মোল্লাকে হত্যা করে।


Top