ভারতের কাছ থেকে অভিন্ন নদীসমূহের পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় না করা পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিম জনপদের প্রকৃতি ও পরিবেশের বিপর্যয় রোধ করা যাবেনা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির পাশাপাশি উজান থেকে মিষ্টি পানির প্রবাহ বন্ধ হওয়া এ অঞ্চলে লবনাক্ততা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা, নদী ভাঙ্গন, নদীর মরে যাওয়া ও সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী বলে মনে করেন তারা।
রোববার খুলনায় ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও মিথ্যা সমাধান’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তারা মতামত প্রকাশ করেন। নারী অধিকার ভিত্তিক সংগঠন বাদাবন সংঘ এ আলোচনার আয়োজন করে। মোংলা বন্দরের নাব্যতা রক্ষায় নদী ড্রেজিংয়ের সমস্ত বালি নিকটবর্তী দাকোপ উপজেলার বানিশান্তায় কৃষি জমিতে ফেলার কারণে সেখানে জীবন ও পরিবেশের বিপর্যয়ের চিত্র উঠে আসে সভা থেকে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে আসা নারীরা জানান, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কৃষি জমিতে কাজ করার সুযোগ অবারিত ছিল। পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে বিপুল সংখ্যক নারীও কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। এ অঞ্চলের অধিকাংশ পরিবার পুরুষবিহীন, নারীরা সেখানে সংসারের হাল ধরেন। বানিশান্তায় উর্বর কৃষি জমিতে পশুর নদীর ড্রেজিং করা বিপুল পরিমাণ বালি ফেলে হাজারো মানুষের আয়ের পথ রুদ্ধ করা হয়েছে।
আলোচকরা জানান, দেশে বালু মহাল আইন আছে। সেখানে কোথায় বালু মহাল করা যাবে, কোথায় যাবেনা, আশেপাশে কি থাকলে বালু মহাল হবেনা- সব কিছু স্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে আইনের প্রয়োগে গাফিলতি রয়েছে। কৃষি জমিতে বালি ফেলার এতোবড় একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে ওই স্থানের কৃষকদের কোন মতামত নেওয়া হয়নি। তারা অভিযোগ করেন, পলিসি মেকিং লেভেলে রাজনীতিবীদরা থাকলেও এসব সমস্যার আমলাতান্ত্রিক সমাধান করা হয়। যেখানে রাজনীতিবীদ ও আমলারা লাভবান হন, ক্ষতিগ্রস্থ হয় সাধারণ মানুষ।
জলবায়ু পরিবর্তনের মিথ্যা সমাধানের উদাহরণ টেনে বক্তারা বলেন, বানিশান্তার কৃষি জমিতে ড্রেজিং করে বালি ফেলার প্রতিবাদে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। তখন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বুয়েটের একটি টেস্ট রিপোর্ট উপস্থাপন করে জানান যে, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে যা কিছু কৃষি জমিতে ফেলা হয়েছে তার ৯৮ শতাংশই পলিমাটি। অথচ আমরা দেখছি ৯৮ শতাংশই বালি। এ নিয়ে বুয়েটের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ যে স্যাম্পল পাঠিয়েছে তা টেস্ট করে এই রেজাল্ট পেয়েছে। স্যাম্পল আমাদের সংগ্রহ না।
বাদাবন সংঘের নির্বাহী পরিচালক লিপি রহমানের সভাপতিত্বে ও নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: নজরুল ইসলাম, বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক এম কেএম ইকবাল হোসেন চৌধুরী, খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ-জামান, খুলনা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক এনামুল হক, পরিবেশকর্মী মো: নুর আলম, নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলদার, বেলার বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল, সাংবাদিক এইচ এম আলাউদ্দিন, কৌশিক দে, আবুল হাসান হিমালয়, দীপংকর রায়, আশরাফুল ইসলাম নূর, মনিরুল হায়দার ইকবাল, নারী নেত্রী সুতপা বেদজ্ঞ, অজন্তা দাস, রেখা মারিয়া বৈরাগী, ভুক্তভোগী গীতা প্রামাণিক, হিরম্ময় রায়, রাজনীতিক জর্নান্দন দত্ত, পরির্তনের এম নাজমুল ডেভিড, আইনজীবী জাহাঙ্গীল আলম সিদ্দিকী প্রমুখ। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাদাবনের প্রোগাম অফিসার ফারিয়া জেসমিন।

