ইসলামে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও শালীনতা রক্ষার গুরুত্ব অসীম। আল-কোরআনে এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা সুরা আন নূরের ২৭ নম্বর আয়াতে বলেন,
“হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য কারও ঘরে প্রবেশ কোরো না, যতক্ষণ না অনুমতি চাও এবং সালাম দাও। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারো।”
পরের আয়াতে (সুরা আন নূর, আয়াত ২৮) আরও বলা হয়েছে,
“যদি ঘরে কাউকে না পাও, তবে অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত প্রবেশ করো না। আর যদি তোমাদের ফিরে যেতে বলা হয়, তবে ফিরে যাওয়া তোমাদের জন্য উত্তম। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সব কাজ সম্পর্কে অবহিত।”
এ আয়াতগুলো স্পষ্টভাবে শেখাচ্ছে যে, কারও ঘরে প্রবেশের আগে অনুমতি চাওয়া শুধু সৌজন্য নয়, বরং ধর্মীয় নির্দেশ। এর মাধ্যমে পারস্পরিক সম্মান, ঘনিষ্ঠতা ও আন্তরিক সম্পর্কের সেতুবন্ধন তৈরি হয়। অনুমতি নেওয়ার মানে হলো নিশ্চিত হওয়া যে, ঘরের মালিক তোমার উপস্থিতিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন এবং বিরক্ত হচ্ছেন না।
এ প্রসঙ্গে হাদিসেও সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অনুমতি ছাড়া অন্যের ঘরে উঁকিঝুঁকি মারা বা বাইরে থেকে তাকানো নিষিদ্ধ। একবার এক ব্যক্তি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অনুমতি চাইলে রাসুল (সা.) তাকে বললেন, “পেছনে সরে দাঁড়াও, যাতে তোমার দৃষ্টি ঘরের ভেতরে না পড়ে। অনুমতি চাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার কারণও এটাই।” (আবু দাউদ)
আরেক ঘটনায়, একজন সাহাবি রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞাসা করেন, “আমি কি আমার মায়ের ঘরে ঢোকার সময়ও অনুমতি চাইব?” উত্তরে রাসুল (সা.) বলেন, “হ্যাঁ, অনুমতি চাইবে।” সাহাবি অবাক হয়ে বললেন, “আমি তো মায়ের সঙ্গেই থাকি।” তখন রাসুল (সা.) বললেন, “তবু অনুমতি ছাড়া প্রবেশ কোরো না। তুমি কি চাও তোমার মাকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে?” (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)
এ থেকে স্পষ্ট হয়, অনুমতি নেওয়ার বিধান শুধু অপরিচিতের ঘরে প্রবেশের জন্য নয়, বরং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও শালীনতা রক্ষা করার জন্য প্রযোজ্য। ইবনে মাসউদ (রা.)-ও বলেছেন, “মা বা বোনের ঘরে প্রবেশের সময়ও অনুমতি নাও।” (ইবনে কাসির)
আমরা সবাই যেন আল্লাহর এই নির্দেশ মানি, কারও ঘরে প্রবেশের আগে অনুমতি চাই এবং সালাম দিই। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন যাতে কারও গোপনীয়তা লঙ্ঘন না করি এবং পারস্পরিক সম্পর্ক আরও সুন্দর হয়।

