হাইকোর্টের খালাস রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লড়াই
২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানি চলছে। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চে টানা তৃতীয় দিনের মতো এ শুনানি শুরু হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। অন্যদিকে আসামিদের পক্ষে উপস্থিত আছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও মোহাম্মদ শিশির মনির।
হাইকোর্টের বিতর্কিত রায়
গত বছরের ১ ডিসেম্বর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলার সব আসামিকে খালাস দেন। পরে ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয় রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি। রাষ্ট্রপক্ষ সেই রায়ের বিরুদ্ধে পৃথক লিভ টু আপিল করে এবং চলতি বছরের ১ জুন আপিল বিভাগ তাদের অনুমতি মঞ্জুর করে।
হামলার ভয়াবহতা ও প্রেক্ষাপট
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে চালানো হয় নৃশংস গ্রেনেড হামলা। ওই হামলা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা।
তবে নিহত হন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ অন্তত ২৪ জন। আহত হন তিন শতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনাটিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া
হামলার ঘটনায় প্রথমে দুটি মামলা দায়ের হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালে প্রথম অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিলে ২০১১ সালে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা হয়। এতে মোট আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জনে।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বিশেষ জজ আদালত রায় দিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তাসহ আরও অনেকে বিভিন্ন মেয়াদের দণ্ডে দণ্ডিত হন।
বর্তমান আপিল প্রক্রিয়া
হাইকোর্টের রায়ে সব আসামি খালাস পাওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে চ্যালেঞ্জ জানায়। আপিলের শুনানি এখন চলছে। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, এটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, যার সঙ্গে জড়িতদের খালাস দেওয়ার মতো কোনো সুযোগ ছিল না। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, মামলার তদন্ত ও প্রমাণ প্রক্রিয়া দুর্বল ছিল, তাই খালাস রায় যথার্থ।
বিশ্লেষণ
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা কেবল আওয়ামী লীগের ওপর আক্রমণ ছিল না, বরং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির ওপর বড় আঘাত। এই মামলার রায় ও আপিল প্রক্রিয়া দেশের বিচারব্যবস্থা, রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আপিল সফল হলে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে; আর খালাসের রায় বহাল থাকলে তা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করবে।

