জামায়াত–এনসিপি থেকে দূরত্ব বাড়ছে ড. ইউনূস সরকারের
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সম্পর্ক দিন দিন শীতল হচ্ছে। বিশেষত আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এই দূরত্ব ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
নির্বাচন নিয়ে মতপার্থক্য
ইউনূস সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হলেও জামায়াত ও এনসিপি তা গ্রহণযোগ্য মনে করছে না। তারা বলছে, সংস্কার বাস্তবায়ন, জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতি এবং নতুন পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন ছাড়া বর্তমান প্রক্রিয়া কেবল “সাজানো নির্বাচন” হবে।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী প্রধান উপদেষ্টার কঠোর সমালোচনা করে দাবি করেছেন, “ফেব্রুয়ারিতে কোনো নির্বাচন হলে তা গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে।” একই সুরে দলটির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ অভিযোগ করেন, লন্ডনে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে সরকার ইতিমধ্যেই আপস করেছে।
বিএনপি বনাম জামায়াত–এনসিপি
নির্বাচনের সময় নিয়ে বিএনপির অবস্থানও জামায়াত–এনসিপির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিএনপি সরকারের ঘোষিত ফেব্রুয়ারির সময়সূচিকে স্বাগত জানালেও জামায়াত প্রকাশ্যে তা প্রত্যাখ্যান করছে। জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “শুধু একটি দল স্বাগত জানিয়েছে—এ থেকেই বোঝা যায় এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়।”
সংস্কার ও পিআর পদ্ধতির দাবি
দুটি দলই নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR) পদ্ধতি চালুর দাবি তুলেছে। জামায়াত হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এসব শর্ত পূরণ না হলে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।
দূরত্বের প্রভাব
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াত ও এনসিপির ধারাবাহিক সমালোচনা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠছে। একদিকে বিএনপি সরকারের ঘোষণাকে মেনে নিয়েছে, অন্যদিকে জামায়াত–এনসিপি প্রকাশ্যে দ্বিমত জানাচ্ছে। ফলে নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধী জোটের মধ্যেই বিভক্তি স্পষ্ট হচ্ছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা দিয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার হলেও জামায়াত ও এনসিপি তাদের শর্তে অনড় থাকায় এই দূরত্ব আরও বাড়তে পারে। আর সেটি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে।

