
বন্ধুত্বের সম্পর্ক কতটা গভীর হতে পারে, তা যেন আবারও প্রমাণ করলেন লুইস সুয়ারেজ। মাঠে লিওনেল মেসির অনুপস্থিতি যেন তিনি টেরই পেতে দিলেন না। ফ্লোরিডার চেজ স্টেডিয়ামে লিগস কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে গ্যালারিতে বসে বন্ধুর খেলা উপভোগ করলেন মেসি, আর মাঠে তাঁর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলেন সুয়ারেজ। পেনাল্টি থেকে করা জোড়া গোলের সৌজন্যে ইন্টার মায়ামি ২-১ ব্যবধানে হারাল মেক্সিকান ক্লাব তিগ্রেস ইউএএনএলকে এবং জায়গা করে নিল সেমিফাইনালে।
মাংসপেশির চোটে ভুগছেন মেসি। ২ আগস্ট গ্রুপ পর্বে নেকাক্সার বিপক্ষে পাওয়া সেই পুরোনো চোটই তাঁকে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচ থেকে দূরে রাখে। দুই সপ্তাহ বিশ্রামের পর গত সপ্তাহে লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সির বিপক্ষে বদলি নেমে গোল করলেও শরীরের শতভাগ প্রস্তুতি মেসি পাননি, সেটি ম্যাচের পরই জানিয়েছিলেন কোচ হাভিয়ের মাচেরানো। সতর্কতার অংশ হিসেবে তাই তাঁকে বেঞ্চে না রেখে পুরোপুরি গ্যালারিতেই বসানো হয়। সাদা টি-শার্ট পরে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করার সময়ই ভক্তরা বুঝে যান, প্রিয় তারকাকে আজ কেবল দর্শক হিসেবেই দেখা যাবে।
ম্যাচের শুরু থেকেই তিগ্রেসের ডিফেন্ডারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে মায়ামি। ২৩ মিনিটে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার হাভিয়ের আকুইনোর হ্যান্ডবলে পেনাল্টি পায় দলটি। ঠান্ডা মাথায় ডান দিক ঘেঁষে শট নিয়ে গোল করেন সুয়ারেজ। তবে এই গোলে এগিয়ে থাকলেও স্বস্তিতে থাকতে পারেনি দলটি। প্রথমার্ধের শেষ দিকে সতীর্থের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার জর্দি আলবাকে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাঠ ছাড়লেও আর ফেরেননি তিনি।
বিরতির সময় নতুন নাটক দেখা দেয় মায়ামি শিবিরে। রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে লাল কার্ড দেখতে হয় কোচ মাচেরানোকে। নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে ডাগআউট ছাড়তে হয়, চলে যান ভিআইপি সিটে। সেখান থেকে সহকারী কোচ লিয়ান্দ্রো স্তিলিতানোকে দায়িত্ব দিয়ে রাখলেও যোগাযোগ রাখতে ভোলেননি। টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে, আরেক সহকারী কোচ লুকাস রদ্রিগেজ পাগানোর সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন তিনি, নির্দেশনাও যাচ্ছিল মাঠে। তবে লিগস কাপের নিয়ম অনুযায়ী গ্যালারি থেকে সরাসরি নির্দেশনা দেওয়া নিষিদ্ধ, তাই ম্যাচের পরে এ নিয়ে সমালোচনা উঠেছে।
দ্বিতীয়ার্ধে প্রতিপক্ষ তিগ্রেস কিছুটা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। ৬৭ মিনিটে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড আনহেল কোরেয়া গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান। গ্যালারিতে বসে মেসি ও মাচেরানোও দেখলেন সেই মুহূর্ত, তবে আনন্দ টিকল না বেশিক্ষণ। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার মাত্র তিন মিনিট আগে আবারও তিগ্রেস ডিফেন্ডার আকুইনোর হ্যান্ডবল ধরা পড়ে ভিএআরে। আবারও পেনাল্টি, আর আবারও একই জায়গায় শট নিয়ে গোল করেন সুয়ারেজ, নিশ্চিত করেন মায়ামির জয়।
শেষ মুহূর্তে তিগ্রেসের এডগার লোপেজের হেড পোস্টে লেগে ফিরলে স্বস্তি পায় মায়ামি। শেষ বাঁশি বাজতেই গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে হাততালি দেন মেসি, মাঠে সতীর্থদের আলিঙ্গন করেন সুয়ারেজ।
এবার সেমিফাইনালে ইন্টার মায়ামির প্রতিপক্ষ হবে অরল্যান্ডো সিটি ও তোলুকার মধ্যকার বিজয়ী দল। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী, ফাইনাল বা তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে জেতা দল কনকাক্যাফ চ্যাম্পিয়নস কাপে জায়গা পাবে, আর শিরোপাজয়ী দল সরাসরি প্রবেশ করবে শেষ ষোলোয়। তাই সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জের অপেক্ষা করছে মায়ামি ও মেসি–সুয়ারেজ জুটির জন্য।

