দুবাই ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ধনীদের জন্য যেন এক স্বর্গরাজ্য। এখানে নেই আয়কর, নেই কঠোর শুল্কের বোঝা, আর আছে বিলাসী জীবনযাপনের অবাধ সুযোগ। বিশ্বের বড় বড় শহরে যখন খরচ বাড়ছে আর নিয়মকানুনের কড়াকড়ি বেড়ে যাচ্ছে, তখন আরব আমিরাত হয়ে উঠেছে সম্পদশালীদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স জানিয়েছে, চলতি বছরই রেকর্ডসংখ্যক প্রায় ৯,৮০০ কোটিপতি আমিরাতে স্থানান্তরিত হবেন, যা বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি। এর পেছনে কাজ করছে নিরাপদ পরিবেশ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ব্যবসাবান্ধব নীতি, অপরাধের নিম্ন হার এবং বিলাসবহুল সুযোগসুবিধা।
‘গোল্ডেন ভিসা’ নীতি চালুর পর থেকে ধনীদের জন্য ১০ বছরের আবাসিক মর্যাদা পাওয়াটা আরও সহজ হয়েছে। ধনীরা মনে করেন, এখানে সম্পদ লুকোনোর দরকার নেই; বরং সমৃদ্ধ জীবনধারাই এখানে স্বাভাবিক। স্কাইবাউন্ড ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান মাইক কোডি বলেন, “লন্ডনে মানুষ তাঁদের সম্পদের কথা গোপন রাখেন, কিন্তু দুবাইয়ে তাঁরা স্বাধীনভাবে তা উপভোগ করতে পারেন।”
বিলাসবহুল শপিং মল, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফা, এবং কৃত্রিম দ্বীপ দ্য পাম—এসবই ধনীদের আকৃষ্ট করছে। তবে সমালোচকরা বলেন, এই উজ্জ্বলতার আড়ালে রয়েছেন কম মজুরির শ্রমিকরা, যাদের কঠোর পরিশ্রমে দাঁড়িয়ে আছে এ অঞ্চলের অর্থনীতি।
রিয়েল এস্টেট বাজারেও দাপট দেখাচ্ছে দুবাই। নাইট ফ্রাঙ্কের তথ্যমতে, এখানে বর্তমানে ৮১ হাজারেরও বেশি কোটিপতি ও ২০ জন শতকোটিপতি বসবাস করছেন। শুধু গত বছরই শহরটিতে ৪৩৫টি বিলাসবহুল বাড়ি বিক্রি হয়েছে, যা নিউইয়র্ক ও লন্ডনের সম্মিলিত সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে। ধনীদের মতে, যেটা পশ্চিমা কোনো শহরে একটি অ্যাপার্টমেন্টের দামে মেলে, দুবাইয়ে সেই দামেই কেনা যায় পুরো একটি ভবন।
এভাবে করমুক্ত অর্থনীতি, ব্যবসাবান্ধব নীতি ও অবারিত বিলাসিতার সংমিশ্রণে দুবাই হয়ে উঠেছে এক বৈশ্বিক মিলিয়নিয়ার হাব—যেখানে সম্পদশালীরা শুধু বসবাসই করছেন না, বরং তাঁদের ব্যবসা ও বিনিয়োগও নিয়ে যাচ্ছেন এই মরুভূমির শহরে।