জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে নিহত খুলনার ৫ শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা জানিয়েছে খুলনা রেঞ্জ পুলিশ। সংবর্ধিত হয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে খুলনার রাজপথে দুর্দমনীয় সাহসী ভূমিকা পালনকারী ছাত্র ছাত্রীরা।
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে পুলিশের খুলনা রেঞ্জ ‘জুলাই স্মৃতিচারণ ও সম্মাননা’র আয়োজন করে।
নগরীর শিরোমনিতে রেঞ্জ ডিআইজি’র ট্রেইনিং সেন্টারে মঙ্গলবার দুপুরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে পুলিশের পেশাদারিত্ব ও মানবিকতার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বক্তারা বলেন, পুলিশ হোক প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী ও জনগণের সেবক। পুলিশ আর কোন অগণতান্ত্রিক শক্তির রক্ষাকবচ হতে চায়না।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. রেজাউল করিম। সভাপতিত্ব করেন খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মো: রেজাউল হক।
বক্তব্য রাখেন ডিআইজি আব্দুর রউফ চৌধুরী, খুলনার এসপি কে এম মোশারফ হোসেন, সিনিয়র সাংবাদিক শেখ দিদারুল আলম, সাংবাদিক এহতেশামুল হক শাওন, জুলাই আন্দোলনে নিহত শহীদ সাকিব রায়হানের পিতা শেখ আজিজুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্ব্য়ক আহম্মদ হামিম রাহাত, সাজেদুল ইসলাম বাপ্পী, সাইফ নেওয়াজ, আয়মান আহাদ প্রমুখ।
খুবি উপাচার্য প্রফেসর ড. রেজাউল করিম বলেন, আজকের দিনটি যেমন আনন্দের, একই সাথে শোকের। মাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনে আমার দুই হাজার সন্তানকে হারিয়েছি। পুলিশের গুলিতে তারা জীবন দিয়েছিল। কিন্ত আজ এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুলিশ এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। পুলিশকে প্রমাণ করতে হবে তারা কোন সরকার বা দলের নয়, তারা জনগনের। জুলাই চব্বিশের সার্থকতা এখানেই যে আজকের তরুণ প্রজন্ম সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে দারুণ প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। অতএব ইচ্ছা করলেই যা খুশি অন্যায় অনিয়ম করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।
খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মো: রেজাউল হক বলেন, মানব সভ্যতার ইতিহাসের সাথে পুলিশের ইতিহাস জড়িত। পুলিশ জনগনের বন্ধু হতে চেয়েছে। কিন্ত ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল এবং স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ- কখনোই আমরা আস্থা ফেরাতে পারিনি। দুই্ লাখ ১৬ হাজার পুলিশ আছে, সীমিত কয়েকজনের কাজের দায়ভার সবাইকে বহন করতে হয়। তিনি বলেন, জুলুম অন্যায় অত্যাচারে যখন আরশ কেপে ওঠে, তখন অনিবার্য পরিণতি হিসেবে জুলাই বিপ্লব আসতে বাধ্য। আগামীকাল সকালের পরিবর্তে কেউ যদি দেশে অন্ধকার নামিয়ে আনতে চায়, মীর মুগ্ধ, আবু সাঈদ, ওয়াসিম আকরাম, আনাসরা আমাদের জন্য আলো এনে দেবে।
বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে সাঈফ নেওয়াজ প্রশ্ন তোলেন, ‘আমরা তো আপনাদের সন্তান। আপনাদের অনেকের (পুলিশ) সন্তান এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছে। কেন আমাদের মাথা, বুক লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লেন? পায়ে গুলি করতে পারতেন, হাঁটুর নিচে গুলি করতে পারতেন। একটা প্রমোশনের কাছে একটা জীবন কি এতোটাই তুচ্ছ?’ এ সময় গোটা মিলনায়তনে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে।
সম্মাননা অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবার, আন্দোলনে রাজপথের যোদ্ধা, গণমাধ্যম কর্মী, খুলনার রেঞ্জের অর্ন্তগত ১০ জেলার পুলিশ সুপার ও বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা অংশ নেন।

