ঢাকা অফিস || ভয়েজ অফ জাস্টিস

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দেশের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাকে জাতীয় ক্লিনিক্যাল গাইডলাইনে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় এই আহ্বান জানানো হয়। ‘বাংলাদেশে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসায় ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকার ভূমিকা: ভবিষ্যৎ পথ নির্দেশনা’ শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করেছে আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআর,বি। এতে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিডিসি ইউনিট এবং ইউএস সিডিসি।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা বিশ্বব্যাপী প্রতি বছরে ৫ কোটির বেশি মানুষকে গুরুতর অসুস্থ করে এবং প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশেও রোগটির প্রকোপ ক্রমেই উদ্বেগজনক। ২০২৫ সালের জুনে দেশের ১৯টি হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, জ্বর-কাশি নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৫৯ শতাংশই ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ছিলেন।
৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি, ৫ বছরের কম বয়সী শিশু, গর্ভবতী নারী, স্বাস্থ্যকর্মী ও দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থ রোগীরা ইনফ্লুয়েঞ্জার ঝুঁকিতে থাকেন। তাদের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের মধ্যে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য বার্ষিক ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেয়, কিন্তু বাংলাদেশে এটি এখনও জাতীয় গাইডলাইনে অন্তর্ভুক্ত নয়। সচেতনতার অভাব, টিকার সীমিত প্রাপ্যতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়, কোল্ড চেইন সমস্যা এবং স্পষ্ট নীতির অভাবই মূল প্রতিবন্ধকতা।
কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা টিকা সহজলভ্য করা, মূল্য কমানো, গণমাধ্যমে প্রচার বাড়ানো এবং জাতীয় নীতিমালায় টিকা অন্তর্ভুক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বেশি, তাই ফেব্রুয়ারি-মার্চে টিকা দেওয়া জরুরি।
আইসিডিডিআর,বির সহকারী বিজ্ঞানী ডা. ফাহমিদা চৌধুরী জানান, বিশেষজ্ঞরা টিকা কার্যক্রম অন্তর্ভুক্তিতে বাধাগুলো চিহ্নিত করেছেন এবং টেকসই সমাধানের সুপারিশ দিয়েছেন। প্যানেল সদস্যদের মধ্যে ছিলেন এনআইটিএজি চেয়ার ডা. ফেরদৌসী কাদরী, টিকা বিশেষজ্ঞ ডা. কে. জামান, প্রাক্তন চেয়ার ডা. আলী কাওসার, ডিজিএইচএসের রোগ নিয়ন্ত্রণ পরিচালক ডা. ফরহাদ হোসেন, ইউএস সিডিসির ডা. উইলিয়াম ডেভিসসহ আরও অনেকে।
তারা বলছেন, দেশের টিকা ব্যবস্থাপনায় টেকসই পরিকল্পনা জরুরি, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে আসার প্রেক্ষাপটে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য টিকা নিশ্চিত করা এখনই প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য উইংয়ের যুগ্ম সচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ এবং ইউএস সিডিসির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. দিমিত্রি প্রিবিলস্কি। তারা সবাই ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে সরকার-বেসরকারি অংশীদারদের সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জানান।
অংশগ্রহণকারীরা একমত হন যে, জাতীয় গাইডলাইন তৈরি এবং টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করা সময়ের দাবি।

